মেঘলা মন

ভালবাসা, ভালবাসা আর ভালবাসা….. চারদিকে শুধু ভালবাসার জয়গান। তাই আপনাদের জন্য এবার নিয়ে এলাম ভালবাসার কিছু বিখ্যাত বাণীর সংকলন। এখান থেকে “বাণী সংকলন” নামে আলাদা একটা ক্যটাগরি চালু করা হল, আশা করি ঊপকৃত হব

অসমাপ্ত মূহুর্তের ভালবাসার গল্প

সুন্দরী নারী

১০টা প্রায় বাজে বাজে অথচ নিতুর দেখা নাই। একটু পর আবার ইতুল ভাইয়ার ক্লাস ।সপ্তাহে মাত্র ২টা ক্লাস উনার , ভুলে ও মিস দেয়া যাবে না ।কোচিং এর সবচেয়ে কিউট আদুরে ভাইয়া কে জানতে চাইলে এক কথায় ইতুল ভাইয়া ।উনার ব্যক্তিত্বটা খুব ভালো লাগে কথার ।জেগে জেগে কল্পনা করা কথার একটা প্রিয় শখ । মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে " এক উত্তাল সাগর পাড়ে ইতুল ভাইয়া আর সে বীচ ধরে হাঁটছে । নীল পাড়ের একটা জামদানী শাড়ি পরনে যার আঁচল উড়ছে বারে বারে মায়ায় বাঁধতে চায় ইতুলকে আর এলোকেশ বাতাসে এলোমেলো করে দিবে সব ।চারপাশ চুপচাপ দুজন হাঁটছে তবে কথা হবে নিরবে যেন শব্দরা চুপিচুপি হারিয়ে যাবে "

হঠাত্‍ হাসি পেল কথার " দুর কি সব ভাবছি । তবে কল্পনাটা অনেক সুন্দর । আরে নিতুটা এত দেরী করছে কেন ! কত করে বলছি দেরি করিস না ।কে শুনে কার কথা ! কি করব ! চলে যাব নাকি বেদ্দপটার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করবো ? আচ্ছা আর ৫ মিনিট অপেক্ষা করি যদি না আসে ওর কপালে আজ খারাপি আছে ।"

যাক ! নিতু আজ কথার মাইর থেকে একদম শেষ মুহুর্তে বেঁচে গেল। একদম কাঁটায় কাঁটায় ৫ মিনিটের মাথায় ম্যাডাম তিনি এলেন ।

= সরি রে কথা ॥ ভাই মাফ করে দেয় আর দেরী হবে না ।আজ তো আবার তোর উনার ক্লাস চল চল ।

( দুজনেই হেসে দিলাম ফিক করে ।)

- দুর র র এসব কি ! লজ্জা লাগে তো । কথা দিয়ে কথাকে ঘুরাই লাভ নেই বেদ্দপ । তোর বিচার তো পরে করবো এখন তাড়াতাড়ি চল ইতুল ভাইয়ার ক্লাস মনে হয় শুরু হয়ে গেছে ।দেরী করলে আবার পেনপেন করবে অটো রেডিওর মত । = চল চল . . .. . দুই সখী হাসতে হাসতে কোচিং রুমের দিকে হাঁটা দিল ।

কথা আর নিতু ইন্জিনিয়ারিং এডমিশন কোচিং করছে । দুই বান্ধবী স্কুল থেকে একসাথে । কিভাবে জানি একজন আরেকজনের মন পড়ে ফেলতে পারে ।কথা ইতুল ভাইয়াকে হেসে জিজ্ঞাসা করলো, -"ভাইয়া আসবো ?" = এখন আসার কি দরকার ছিল ? যেখানে ছিলা এতক্ষণ ওখানেই থাকতা ! বাইরেই থাকো ! ক্লাস করার ইচ্ছে থাকলে ২০ মিনিট লেট হয় কিভাবে? এখন দাঁড়াই আছো কেন ? ভিতরে আসতে কি দাওয়াত দিতে হবে ?

( পুরাই আজব এক ছেলে ! এভাবে বকা দেয়ার কি আছে ? মাত্র ২০ মিনিট লেট তাতেই এত বকা দেয়ার কি আছে ? )

কথা গুলো মনে মনে ভেবে কান্না এসে গেল প্রায় কথার। চশমাটাও ঝাপসা হয়ে গেছে ।আর তাড়াহুড়ায় তখনই বিপত্তিটা বাঁধলো ।চোখ ঝাপসা থাকায় খেয়াল করেনি পথের সামনের টুলটা ! একটা উস্টা খেয়ে ফেললো জোরে।

-এই মেয়ে কি হয়ছে ? দেখে শুনে হাঁটতে পারো না ? ব্যথা পাইছো ? চশমা একটা দিয়ে ও দেখো না ? আর যে কত সময় নষ্ট করবে এক আল্লাহ জানে । যাও বসো ।তাড়াতাড়ি বই খুলো ।

কথার খুব খারাপ লাগছে ইতুলের এত রুক্ষ কথায় ।যেন ইচ্ছে করে বকা দিচ্ছে ।" ছেলেটাকে ভালো লাগে তাই লুকিয়ে লুকিয়ে না হয় একটু দেখি তাইবলে এখানে সবার সামনে এভাবে বকা দিবে ? আজ কত শখ করে চোখ জোড়ায় গাঢ় কাজল দিলাম অথচ এখন এসব হচ্ছে আমার সাথে ! ইচ্ছে করছে এক ছুটে রুম থেকে চলে যাই ।পড়ার ইচ্ছে টাই চলে গেছে ।অনেক কান্না আসছে বাঁধ ভেঙ্গে " - কোন মতে চোখের জল আটকে নিতুর পাশে বসলো কথা ।চশমা খুলে যাতে কেউ না দেখে মত চোখের জল মুছে নিলো । কাজলগুলো চোখের নিচে ছড়িয়ে একাকার হয়ে গেছে হয়তো তাতে কার কি আসে যায় ! যার জন্য দেয়া সে তো দেখলো না !

- এই মেয়ে ? হ্যাঁ তুমি মিস লেটকামার ! এ পড়াটা বুঝছো? দেখি বলো তো ?ওমা এখন ও খাতা ও তো খুলো নি? এখানে পড়তে আসছো না মুখ দেখাতে ? = ভাইয়া পারবো না । - পারবেনা কেন ? ক্লাসে মন নাই ?

( কথা চুপ । আর উত্তর দেয় না । আজ অনেক অপমান করছে । বুয়েটে পড়ে বলে কি তার অধিকার আছে যাকে তাকে সবসময় অপমান করার । অনেক সহ্য করছে আর না)

ইতুল ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই খেয়াল করছে মাঝের সারির একটা মেয়ে চশমার আড়াল থেকে পুরো ক্লাস একদৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকে । ওর লজ্জা লাগে অনেক তাইতো সরাসরি তাকায় না ।তবে খুব ইচ্ছে করে তাকিয়ে থাকতে । মেয়েটাকে ওর অনেক ভাল লাগে । একদম সাধারণ একটা মেয়ে অথচ অসাধারণ কিছু একটা আছে ওর ঐ চোখে । চশমার আড়ালে ঢাকা ঐ চোখ ইতুলকে অনেক টানে ।মেয়েটাকে পুরো ক্লাস বকা দেয়ার উপর রাখে শুধু চশমার আড়ালের ঐ কাজল দেয়া চোখ গুলো বার বার দেখতে । কিন্তু আজ নিজের রাগ এই মেয়েটার উপর ঝেঁড়ে নিজেকে অনেক অপরাধী লাগছে ।২০ মিনিট হয়ে গেছে অথচ আসছে না তাই টেনশান হচ্ছিলো তাই তো বকা দিল । দেরীতে আসলে ও তো আসছে এটা দেখে বেশি খুশি হতে গিয়ে উল্টো পরিবেশ হয়ে গেল।দুর এত বকা দেয়া উচিত হয়নি । মেয়েটা যখন উস্টা খেল অনেক খারাপলাগছে ব্যথা যে ও পাইছে এটা ভেবেই । " উফ ফ ফ কথার সাথে এভাবে ব্যবহার করা উচিত হয় নি । যখন সে টলমলে জলভরা চোখে একবার তাকালো লেপটানো কাজলে চোখ জোড়ায় এক অদ্ভুত অভিমান ছিল যেন চোখ গুলো আমার সাথে আড়ি নিল আর তাকাবে না । ভিতরটায় একটু মোচড় দিয়ে উঠলো ।"

ইতুল যে কি ভাবে পড়ানো শেষ করলো এক সেই জানে । কথাকে সরি বলা উচিত কিন্তু ইগোর জন্য পারছে না । কি করা যায় ! এই ইগোটাই একদিন সব শেষ করবে ।

পুরো ক্লাস কথা আর একটিবার ও তাকালো না ইতুলের দিকে । কোন রকমে ঐ দেড় ঘন্টা কান্না আটকে ক্লাস শেষে তড়িঘড়ি করে কথা ও বেরিয়ে গেল । একটিবার ফিরে ও দেখলো না ।অনেক রাগ করছে হয়তো ইতুল ভাবলো "এই রুক্ষ মেজাজ একদিন ডুবাবে আমায় " এ ভেবে অফিসের দিকে হাঁটা দিলো ইতুল ।

অতঃপর . . . . . পরের ক্লাসে . . .

ইতুলের চোখ জোড়া দিয়ে তন্যতন্য করে ও কথাকে খুঁজে পেল না ।আজ সময়টা যেন থমকে আছে মনে হচ্ছে । কথাকে একটু দেখার জন্য মনটা আনচান করছে ।বারে বারে চোখ যায় দরজার দিকে । এই হয়তো আসবে সে . . . আজ আর বকবে না ইতুল । সুন্দর করে কথা বলবে কথার সাথে । চোখ জোড়া হয়তো আজ হাসবে । ওকে বলবে যে সে আরো গাঢ় করে কাজল দেয় কিন্তু সে যে আর আসে না . . . . . .

এভাবে সে প্রতি ক্লাসে অপেক্ষায় থাকে কথা আসবে কিন্তু এ অপেক্ষার আর শেষ হয় না ।

স ব . . শেষ . . কখন ও হয় না . . . .

Share this article :

Post a Comment

 
Rudra Das © 2014. মেঘলা মন? - I MISS YOU MONI
Template Created by রুদ্র দাস